কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি :

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীর বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে। উপজেলায় তার বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র সাংবাদিকরা জাতীয় পত্রিকাসহ বিভিন্ন  টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে তুলে ধরলে তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। এরপর তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে থাকেন । সাংবাদিকরা নিউজের প্রয়োজনে অনুসন্ধানী বা জনকল্যাণমুলক নিউজের বক্তব্য নিতে গেলে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন ওই ইউএনও। কেরে নেন সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন। সাংবাদিকরা তার বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরায় রেগে গিয়ে উপজেলা চত্বরে রাখা সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দিলেন তিনি।

এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী সাংবাদিক সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের আদেশে সকল ইউএনও ও অফিসার ইনর্চাজদের (ওসি) বদলি করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সারা দেশের মত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলি করে পাশের উপজেলা ধামরাইয়ে নিয়োগ দেয়া হয় এবং ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীকে কালিয়াকৈর উপজেলায় নিয়োগ দেয়া হয়।তিনি এখানে যোগ দিয়েই, একটি মাত্র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি খেকোদের চারটি ভেকু জব্দ করে। এতে সাংবাদিকরা তাদের প্রতিষ্ঠানে নিউজ আকারে তুলে ধরেন। সাধারন জনগত বাহ্ বাহ্ দিতে থাকে। কিন্তু এটাই ছিল তার টাকা হাতিয়ে নেয়ায় কৌশল মাত্র। ওই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পর, উপজেলার সকল মাটি ব্যবসায়ীদের দৌড়-ঝাঁপ বেড়ে যায় ইউএনও অফিসে। তার কিছু দিনের ভিতরেই ইউএনও অফিস ম্যানজকরে, মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি, উচু জমি, খালের পাড়, টিলা, নদীর তীরসহ প্রায় অর্ধশত পয়েন্টে মাটি কাটার উৎসবের অনুমোদন দেন তিনি। জানা যায়, এদেরকে ওই ইউএনও অলিখিত মাটি কাঁটার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এসব বিষয়ে সাংবাদিকরা নিউজ প্রচারের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হিসেবে তার বক্তব্য নিতে গেলে রেগে যান ওই ইউএনও। খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন তাদের সাথে। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেরে নেন তিনি ও তার দেহ রক্ষী (আনসার) নিহারুল। এর পর অপমানসহ সাংবাদিকদের ভয় ভীতি দেখাতে থাকেন। পরে সাংবাদিকদের তার অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। এর পূর্বে লোক মুখে ও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই ইউএনও নৌকার মাঝির বিরোধীতা করেন। এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও নৌকার কর্মিদের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে। গত (০৪ফেব্রুয়ারী) অবৈধ ইট ভাটায় লোক দেখানো এক অভিযান করে তিনি। এবিষয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিউজ প্রকাশ হলে মাথায় বাজ পরে তার। এর আক্রোশে তিনি গত শনিবার থেকে এক সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেন তার দেহ রক্ষী (আনসার) দিয়ে। এর কারন হিসেবে তিনি উপজেলা চত্বরে গাড়ি রাখা যাবে না বলে জানান। এর কারন ধরেই তিনি দেহ রক্ষী (আনসার) দিয়ে গাড়ির চাকাই তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অবশেষে তিনি কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সভাপতি/সাধারন সম্পাদকসহ উপজেলার সকল সাংবাদিকদের জানালে বিষয়টি জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে পরে। এ নিয়ে সুশীল সমাজ ও সচেতন মহল তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সম্মানের সাথে ওই সাংবাদিকের গাড়িটি ইউএনওর বুঝিয়ে দেয়া এখন সময়ের দাবীমাত্র।

নাম সংরক্ষিত, এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন পৌর বাসিন্দা জানান, দেশে সাংবাদিকরা এখন নিরাপদ নেই। যেখানে সাংবাদিকরা নিরাপদ না, সেখানে সাধারণ জনগন কতটুকু নিরাপদ আছে? এই ইউএনও উপজেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। 

কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সদস্য, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও ওই গাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন আগে উপজেলা চত্বরে গাড়ি রাখায় ওই ইউএনর দেহ রক্ষী (আনসার) আমাকে গাড়ি রাখতে নিষেধ করেন। এর পরে আমি সেখানে আর গাড়ি রাখি না। কিন্তু গতকাল অফিস সময়ে ওই চত্বরে অন্যদের মতো আমি গাড়ি রেখে বাহিরে গেলে গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

কি কারনে সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হলো জানতে চাইলে মুঠোফোনে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, উপজেলা পরিষদ পাকিং করার জায়গা না। এখানে কেউ অবৈধ ভাবে পাকিং করলে আমরা তালা বদ্ধ করতেই পারি। ওনি আইসা, ওনার গাড়ি নিয়ে যাবে, নিজ দায়িত্বে।এখানে বক্তব্য নেয়ার দরকার নাই। ওনার আসার দরকার। উত্তেজিত কন্ঠে বলতে থাকে, এটা কি নিউজ করার বিষয়।