কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসন এবারের আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে সাংবাদিক, হেভিওয়েট আওয়ামীলীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ দিয়ে কমিটি পুর্নগঠন করেছে। তবে সাংবাদিক, আওয়ামীলীগ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বাদ পড়লেও, বাদ পড়েনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামীর নাম। ইউএনওর লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করাসহ নানা অপকর্মের চিত্র প্রতিবেদন আকারে সংবাদ প্রকাশ করলে খুবে, রাগে, সাপের মত ফুঁসে ওঠে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী। এতে সাংবাদিকদের সাথে খারাপ আচারণসহ বিভিন্ন লোক মুখে সাংবাদিকদের হুমকি দেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না করতে পেরে এবারই প্রথম সাংবাদিকদের নাম বাদ দিয়ে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটিকে পুর্ণগঠন করেন তিনি। তবে এ কমিটিতে সহজেই স্থান পেয়েছে বর্হিবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকা অন্যতম আসামী আইয়ুব রানার নাম। তিনি একজন অসত লোভী ব্যক্তি ও তার নামে রাষ্ট্রদোহী মামলা রয়েছে। দীর্ঘ সময় জেল খেটে, তিনি এখন জামিনে রয়েছে। ওই মামলা এখন স্বাক্ষীতে চলমান রয়েছে। এছাড়াও হেভিওয়েট আওয়ামীলীগের নেতা ও কয়েক জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামও বাদ দিয়েছে তিনি। ইতিপূর্বে উপজেলার তিনটি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ছাড়াও পর্যাপ্ত সংখ্যক সাংবাদিক মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত থাকার সুযোগ ছিল।
কিন্তুু বর্তমান (ইউএনও) কালিয়াকৈর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের সাথে সাথে এবারের জাতীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নাম করে টাকা আদায় করা, মাটি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া এবং সাংবাদিক ও লোকজনের সাথে অসাদাচরন করে থাকে। এসব অনিয়ম পত্রিকায় প্রকাশের জেরে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এছাড়াও নৌকার পক্ষের যে সকল আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধারা কাজ করেছে তাদের চিহ্নিত করে বেছে বেছে তাঁদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। আর যারা নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছে তাদেরকে রাখা হয়েছে এ কমিটিতে। অপরদিকে নৌকার পক্ষের নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও সচেতন নাগরিক যাতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত না থাকতে পারে, সেই জন্য তিনি এবারের কমিটি থেকে এদের নাম বাদ দিয়েছেন। এবারের সংশোধিত কমিটিতে সর্বমোট ৪০জন সদস্য নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০জন শিক্ষক, ৯জন চেয়ারম্যান, মাত্র দুইজন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। কিন্তু আগের কমিটিতে বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের, সরকার দলীয় অনেক হেভিওয়েট নেতৃবর্গের, বাজার বনিক সমিতির সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের, কালিয়াকৈর তিনটি প্রেসক্লাবের সভাপতি/সাধারন সম্পাদকের, মসজিদের ইমাম সাহেবদেরসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের সদস্য করা হয়েছিল। কিন্তু এবার অদৃশ্য কারনেই বাদ দেয়া হলো এসকল সচেতন ব্যক্তিদের নাম। এর কারন হিসেবে বলা যায় মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও আওয়ামীলীগ নেতারা মাসিক সভায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া অপকর্ম তোলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এবং তাদের বক্তব্যের কারনে ওই সকল অনিয়ম বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হয়। ইউএনওর প্রশ্ন হলো, এসকল অনিয়ম অভিযোগের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তার কাছে তোলে ধরবেন। হেভিওয়েট আওয়ামীলীগ নেতা বা সাংবাদিকরা কেন?
কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিকদার জহিরুল ইসলাম জয় জানান, আমি শুনেছি এমন একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। বরাবর যারা ওই কমিটিতে ছিল, তাদের নাম বাদ দেয়াটা ঠিক হয়নি। এটা নিয়ে আমরা কালিয়াকৈর আওয়ামী লীগ আলোচনা করবো।
কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির বলেন, যে কমিটি করা হয়েছে, এটা সঠিক হয়নি। সে যদি একাই একাই এটা করে থাকে। তাহলে সে নিজেই এটার দায় ভার নিবে। আর একটা কথা, সে কি একাই, কারও পরামর্শ ছাড়া এই কমিটি করতে পারে?
গাজীপুর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকবর আলী জানান, যে ব্যক্তি, নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। সে আবার আওয়ামীলীগ নেতাদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও সাংবাদিকদের নাম বাদ দিবেন না কেন? ইউএনও কারও সাথে, কোন পরামর্শ ছাড়াই এ কমিটি করেছে। এটা খুব খারাপ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় এটা যে, নৌকার বিরোধীতা করেছে যারা। তাদের নাম এ কমিটিতে ঠিকই রয়েছে।
এ বিষয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা আবদুল রশিদ বলেন, এই ইউএনও কালিয়াকৈর যোগদান করার পর এখানে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। সে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। আমরা যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, যারা নৌকার হয়ে কাজ করেছি। তাদের এই কমিটিতে রাখা হয়নি। এটা খুবই অন্যায় করেছেন তিনি। তার মনগড়া একটা আইন শৃঙ্খলা কমিটি করেছে তিনি।
কালিয়াকৈর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ হোসেন খোকন জানান, এটা বৈষম্যমূলক কমিটি হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কালিয়াকৈর মডেল প্রেসক্লাবের সভাপতি ইমারত হোসেন বলেন, এই কমিটি মনগড়া হয়েছে। এই কমিটির মাধ্যমে কালিয়াকৈরবাসী ভাল কিছু পাবে না। কারন এখানে সচেতন মানুষের অভাব রয়েছে। যারা জনগনের জন্য কাজ করে, তাদের নাম এখানে বাদ পড়েছে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীর কাছে এবিষয়ে বক্তব্যের জন্য মুঠোফোনে একা দিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোনটি তুলেননি।
0 Comments
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন