গাজীপুর প্রতিনিধি,

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি নির্মাণাধীন সেফটি ট্যাংকিতে বিষাক্ত গ্যাসে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অপর এক নির্মাণ শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকায়  বুধবার বিকেলে। 

নিহতরা হলেন, রংপুরের বদরগঞ্জ থানার মুস্তাকপুর এলাকার রশিদ মিয়ার ছেলে শাহীন আলম (২৮), কুড়িগ্রামের রাজার হাট উপজেলার নাটোয়া মোহন এলাকার গ্রামের বাদশা মিয়া ছেলে মাহবুব হোসেন (২৭)। এছাড়া আহত হলেন, মহসিন আলী (৩৫)। তাদের সবার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছর। তারা সবাই সফিপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে নির্মাণ ঠিকাদার মিজানুর রহমানের অধীনে রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন।

এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর পূর্বপাড়া এলাকার শামসুল আলমের ছয়তলা ভবনের নির্মানাধীন সেফটি ট্যাংকিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুরে ওই ভবনের ট্যাংকির কাজে যান তারা। বিকেলে ওই ট্যাংকির সেন্টারিং বাঁশ খুলতে নির্মাণাধীন সেফটি টাংকির নিচে নামেন। কিন্তু আর উপরে উঠে আসেনি। এরপর অপর এক শ্রমিক ওই সেফটি ট্যাংকির ভিতরে যান। তিনিও আর উপরে উঠে আসেনি। কিন্তু ডাকাডাকি করলেও তারা দুজন উপরে না উঠলে আরেক শ্রমিকের সন্দেহ হয়। পরে ডাকচিৎকার করে তৃতীয় শ্রমিকও ওই সেফটি ট্যাংকির নিচে নামেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই সেফটি ট্যাংকির ভেতরে ওই নির্মাণ শ্রমিক শাহীন, মাহবুব ও মহসিন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর আশপাশের লোকজন তাদের উঠাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে তাদের তিনজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে শাহীন ও মাহবুব নামে দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।  এ সময় অজ্ঞান অবস্থায় মহসিন আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্মাণাধীন ওই সেফটি ট্যাংকির চর্তুদিক পুরোপুরি বন্ধ থাকায় ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। ওই বিষাক্ত গ্যাসের বিষক্রিয়ায় তারা তিনজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং দুই নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

নিহত শাহিনের মা শাহিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কয়েক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আমার একটি মাত্র ছেলে। আমার আর কোন সন্তান নেই। দুপুরে প্রত্যেক দিন খাবার খেতে বাসায় আসে। কিন্তু আজকে আমার ছেলে দুপুরে খেতে আসেনি। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি আমার ছেলে সেফটি ট্যাংকির ভেতরে মারা গেছে। এসব কথা বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন শাহিনের মা। 

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণাধীন ট্যাংকির ভেতর থেকে দুই শ্রমিকের  লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া অপর এক শ্রমিককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম জানান, আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহত দুই শ্রমিকের লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।