কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যার পর মাটিচাপা দিয়ে গুম করার ঘটনায় তিন আসামির তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আবদুন নূর আজ রোববার দুপুরে এ আদেশ দেন।

তিন আসামি হলেন নিহত আসাদ মিয়ার মা জুমেলা বেগম, বোন নাজমা ও ভাগনে আল-আমিন। এর আগে তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য  ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কটিয়াদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম।


এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া নিহত আসাদ মিয়ার ছোট ভাই দীন ইসলাম গতকাল শনিবার একই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। কোর্ট পরিদর্শক হাম্মাদ হোসেন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিহত আসাদ মিয়া ও পারভিন আক্তার দম্পতির মেজ ছেলে তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আসামিরা হলেন বাদীর চাচা দ্বীন ইসলাম, দাদি কেওয়া খাতুন, ফুফু নাজমা বেগম, তাসলিমা বেগম, ফুফা ফজলু মিয়া, ফুপাতো ভাই আল-আমিন, আজিজুল ইসলাম, মিজান মিয়া ও রায়হান মিয়া। এর মধ‌্যে লাশ উদ্ধারের দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করা হয়। বাকি পাঁচ আসামির সবাই তাঁদের নিকটাত্মীয় বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কটিয়াদীর বনগ্রাম ইউনিয়নের জমশাইট গ্রামে বাড়ির কাছেই মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় মো. আসাদ মিয়া (৫৫), তাঁর স্ত্রী পারভিন আক্তার (৪৫) ও তাঁদের ছেলে লিয়নের (৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশের একটি দল। নিহতরা গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল।

নিহত আসাদ মিয়া জামশাইট বাজারের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মোফাজ্জল (২৫) ও তোফাজ্জল (১৩) নামের আরো দুই ছেলে রয়েছে তাঁর। তাঁরা বাড়িতে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিহত আসাদ, তাঁর স্ত্রী পারভিন ও ছেলে লিয়ন গত বুধবার রাতে নিজঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকালে মেজ ছেলে তোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে ফিরে নিজেদের বাড়িতে যায়। কিন্তু বাড়িতে মা-বাবা ও ছোট ভাইকে খুঁজে পায় না। পরে আত্মীয়-স্বজনের কাছে জিজ্ঞেস করলেও কেউ কোনো সঠিক উত্তর দেয় না। পরে তোফাজ্জল পুলিশের কাছে বিষয়টি জানায়। পরে পুলিশ নিখোঁজদের সন্ধানে মাঠে নামে। এরপর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির পেছনে একটি নির্জন স্থানের গর্ত থেকে একটি হাত দেখা গেলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন মহলকে বিষয়টি জানান ওসি এম এ জলিল। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মাশরুকুর রহমান খালেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল শনিবার লাশ তিনটির ময়নাতদন্ত কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।